| |
               

মূল পাতা রাজনীতি নির্বাচনী প্রস্তুতিতে ২০১৮ সালের প্রার্থীরাই বিএনপিতে গুরুত্ব পাচ্ছেন


বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

নির্বাচনী প্রস্তুতিতে ২০১৮ সালের প্রার্থীরাই বিএনপিতে গুরুত্ব পাচ্ছেন


রহমত নিউজ     07 August, 2023     10:25 AM    


ক্ষমতাসীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিরোধীদল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ধারাবাহিক আন্দোলনে থাকলেও এর মধ্যেই দলটির অভ্যন্তরে চলছে নির্বাচনের জন্য দল ও প্রার্থীদের তৈরি করার প্রস্তুতি।

দলের নেতারা বলছেন. নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ‘যে কোন প্রক্রিয়ায়’ রাজনৈতিক অঙ্গনে কোনো সমঝোতা হলে সঙ্গে সঙ্গেই যেন নির্বাচনের মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়া যায় সেজন্য পূর্বপ্রস্তুতি চলছে দলের ভেতরে। আর এ কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে যারা দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন তাদেরকেই প্রাথমিকভাবে বা এখন পর্যন্ত দল থেকে আগামী নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী বিবেচনা করে দলীয় কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিটি এলাকায় এসব প্রার্থীদের অবস্থান এখন কেমন, গত কয়েক বছরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে তারা যোগাযোগ রেখেছেন কি-না বা এলাকায় এখন কেমন প্রভাব- এসব বিষয়ে দলের হাইকমান্ড থেকে দফায় দফায় তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

দলের সিনিয়র একজন নেতা বলেন, তারেক রহমান প্রতি সপ্তাহে সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের সাথে এসব বিষয়ে একাধিক বৈঠক করছেন। কখনো সবাইকে নিয়ে আবার কখনো কোন নির্দিষ্ট বিভাগ বা জেলা নিয়ে আলোচনা করে নির্দেশনা দিচ্ছেন যাতে করে সঠিক প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পরে সমস্যা না হয়।

দলের যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল অবশ্য বলছেন, নির্বাচনমুখী দল হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছে বিএনপি, যাতে করে সরকারের পদত্যাগের দাবি আদায় মাত্রই দল নির্বাচনের মাঠে নেমে যেতে পারে। আমার জানা মতে সাংগঠনিক সম্পাদকদেরই সাথেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সর্বোচ্চ সংখ্যক সভা করেছেন। এটি দলকে যেমন চাঙ্গা করেছে তেমনি দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের জন-সম্পৃক্ততা বাড়াতেও সহায়তা করছে।

দলটির রংপুর বিভাগের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলছেন, সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত হওয়ার পর আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য কারা সক্রিয় আর কারা নিষ্ক্রিয়- এটিসহ মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনের জন্য দলের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করার কাজ চলছে।

দল পুনর্গঠন তৎপরতা চলছে
দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন যে এ পর্যন্ত অন্তত ৩৬টি জেলায় সম্মেলন করে নতুন কমিটি গঠন করেছেন তারেক রহমান। প্রতিটি সম্মেলনে তিনি ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছেন এবং কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে নিজেই সম্ভাব্য নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর , সিলেট জেলা ও মহানগর, দিনাজপুর জেলা, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, বগুড়া ও চাঁদপুরসহ এই ৩৬টি জেলায় সক্রিয় ও আগামী নির্বাচন প্রার্থী হতে পারেন-এমন নেতাদের কমিটিতে আনা হয়েছে। নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জসহ আরো কিছু জেলায় আহবায়ক কমিটি করা হয়েছে নতুন করে সম্মেলনের জন্য।

দলের নেতারা বলছেন, সাম্প্রতিক বিভাগীয় সমাবেশ গুলো শেষ হওয়ার পর দল থেকে অনেক নেতাকে কর্মসূচি সফল করার ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য প্রশংসা করে চিঠি দেয়া হয়েছে।

দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নেতা বলেন, অনেকের এ ধরণের প্রশংসামূলক চিঠিতে নির্বাচনী আসনের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। এ থেকে ধারণা করা যায় যে দলের চেয়ারম্যান এসব নেতাদের নির্বাচনী প্রস্তুতিরও ইঙ্গিত দিয়ে রাখছেন।

আসাদুল হাবিব দুলু বলছেন, বয়সের কারণে যারা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সময় দিতে পারছেন না আর যারা এমনি নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন- এরা ছাড়া ২০১৮ সালের প্রার্থীরাই অগ্রাধিকার পাবেন নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে। অতীতে যারা নির্বাচন করেছেন। এর মধ্যে যাদের ইমেজ ভালো ও জন-সম্পৃক্ততা আছে তারাতো বিবেচনাতেই থাকবেন। দল তাদের খুঁজে বের করছে।

সমমনা দল ও জোট সঙ্গীদের কী হবে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন যে বর্তমান সরকারের পদত্যাগের পর ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনে’র মাধ্যমে তার দল ক্ষমতায় গেলে এখন যারা বিএনপির সাথে একযোগে আন্দোলনে আছে তাদের সবাইকে নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠন করবে তার দল। এ কারণে দলের অনেকে ধারণা করছেন বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিলে তাতে মনোনয়নের ক্ষেত্রে ‘আন্দোলনের সহযাত্রী’দেরও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে। দলীয় নেতাদের ধারণা আন্তর্জাতিক চাপের কারণে ‘একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত তৈরি হবে’ এবং তাতে দুই প্রধান দলেরই সায় থাকবে। যদিও বিএনপি যেমন এখনো সরকারের পদত্যাগের দাবিতে অটল তেমনি আওয়ামী লীগও অনড় আছে সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকার প্রধানকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন করার বিষয়ে।

তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে সমঝোতা হয়ে গেলে বা সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করতে পারলে এরপর যে নির্বাচন হবে তাতে জোট ও সমমনাদের জন্য অন্তত একশ আসন ছেড়ে দিতে হবে- এমন আলোচনাও আছে দলের মধ্যে। বিএনপি এখন সমমনা ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলীয় মহাসচিব।

দলের নেতারা আশা করছেন, এসব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সমমনা দলগুলো থেকে ‘কোয়ালিটি প্রার্থী’ কারা হতে পারেন সে সম্পর্কেও একটি ধারণা বিএনপি নেতারা পাচ্ছেন। আবার নেতাদের একটি অংশ মনে করছেন ‘আন্দোলন আর আন্তর্জাতিক চাপে’ সরকারি দলকে সত্যিকার অর্থেই রাজনৈতিক ভাবে বিপদে ফেলতে এখনকার সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও বিএনপির দিকে ঝুঁকতে পারে। তেমন পরিস্থিতি তৈরি হলে দলটির নির্বাচনের মাঠে আলোচনায় আসবে জাতীয় পার্টিও। তবে এ সব কিছুই নির্ভর করবে আগামী দু মাসের দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় তার ওপর।